Articles

ল্যাসিক – সর্বাধুনিক চক্ষু চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতা
  • 22 February 2024
ল্যাসিক – সর্বাধুনিক চক্ষু চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতা

ল্যাসিক - সর্বাধুনিক চক্ষু চিকিৎসা পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতা (Lasik BD, Lasik at Dhaka Eye Care Hospital, Lasik in Bangladesh)

প্রশ্নঃ ল্যাসিক কি ?

 
বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি আর অভিনব উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানুষের মনে দানা বাঁধছে নতুন নতুন স্বপ্ন এবং নতুন নতুন জীবন শৈলী। আর এরই সাথে যোগ হয়েছে চশমা ছাড়াই ভাল দেখার এক নতুন প্রত্যাশা। আর সেই প্রত্যাশার অপর নাম ল্যাসিক। ল্যাসিক হচ্ছে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের চোখে যে আলোর প্রতিসরণ জনিত দৃষ্টি ত্রুটি রয়েছে তা সারিয়ে দেবার এক অভিনব পদ্ধতি। এক কথায় লেজারের মাধ্যমে চশমার পাওয়ার সারিয়ে দেওয়ার নামই ল্যাসিক।
 

প্রশ্নঃ দৃষ্টি ত্রুটি কেন হয় ?

স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আমরা যখনই কোন বস্তু বা জিনিসের দিকে তাকাই তখনই সেই বস্তু থেকে আলোকরশ্মি আমাদের চোখের ভিতরে প্রবেশ করে এবং চোখের সবচেয়ে পেছনের যে আবরণ, যার নাম রেটিনা, সেই রেটিনার একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয়। আর তখনই ওই বস্তুটি আমাদের চোখের সামনে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।
 
কিন্তু কখনও কখনও আলো রেটিনাতে কেন্দ্রীভুত না হয়ে রেটিনার সামনে অথবা পেছনে কেন্দ্রীভুত হয়। আর তখনই কোন বস্তুর ছবি আমাদের চোখে ঝাপসা লাগে। এটিই হচ্ছে আলোর প্রতিসরণ জনিত দৃষ্টিত্রুটি বা চোখের পাওয়ারের সমস্যা। এটি মূলত তিন ধরনের হয়। এই তিন ধরনের আলোর প্রতিসরণ জনিত দৃষ্টিত্রুটি একক ভাবে বা যৌথ ভাবে থাকতে পারে।
 
১। মাইয়োপিয়া বা নিকট দৃষ্টিবদ্ধতা, যাকে আমরা মাইনাস পাওয়ারের সমস্যা বলে থাকি। এক্ষেত্রে আলো রেটিনার সামনে কেন্দ্রিভুত হয়। 
২। হাইপারমেট্রোপিয়া বা দূরদৃষ্টিবদ্ধতা, যাকে আমরা প্লাস পাওয়ারের সমস্যা বলে থাকি। এখানে আলো রেটিনার পিছনে কেন্দ্রীভূত হয়। 
৩। এষ্টিগমেটিজম বা বিষম দৃষ্টিবদ্ধতা, যাকে আমরা সিলিন্ডার পাওয়ারের সমস্যা বলে থাকি। এক্ষেত্রে আলো রেটিনার একটি  বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত না হয়ে একটি সরল রেখায় আপতিত হয়। 
 

প্রশ্নঃ দৃষ্টি ত্রুটি কিভাবে সারানো সম্ভব ?

এই তিন ধরনের দৃষ্টিত্রুটি আমরা তিন ভাবে সমাধান করতে পারি। প্রথমটি হলো চশমার মাধ্যমে, দ্বিতীয়টি হলো কন্ট্যাক্ট লেন্সের মাধ্যমে এবং তৃতীয়টি হলো রিফ্রাকটিভ সার্জারীর মাধ্যমে যার মধ্যে ল্যাসিক অন্যতম। যেহেতু চশমা এবং কন্ট্যাক্ট লেন্স এক ধরনের নির্ভরশীলতা, তাই খালি চোখে দেখবার জন্য ল্যাসিকের কোন বিকল্প নাই। একমাত্র ল্যাসিকের মাধ্যমেই আলোর প্রতিসরণ জনিত দৃষ্টিত্রুটি স্থায়ী ভাবে সারিয়ে দেওয়া সম্ভব। 
 

প্রশ্নঃ ল্যাসিক কিভাবে করা হয় ?

প্রথমেই আমরা চোখে অবশকারী ড্রপ দেই। রোগীকে একটি সবুজ বাতির দিকে তাকিয়ে থাকতে বলা হয়। তারপর অটোমেটিক মাইক্রোকেরাটোম যন্ত্রের সাহায্যে আমাদের কর্ণিয়া বা নেত্রস্বচ্ছের সামনের অংশে ১২০ মাইক্রোন গভীরতায় সাড়ে ৯ মিলিমিটার চওড়া একটি পাতলা আবরণ সাময়িক ভাবে উত্তোলন করা হয়। এখানে বলে রাখা ভাল যে, আমাদের নেত্রস্বচ্ছ গড়ে ৫০০ মাইক্রোন পুরু। ১২০ মাইক্রোনের এই পাতলা আবরণটিকে আমরা এক পাশে হেলিয়ে রাখি। এরপর এক্সাইমার লেজার নামক একটি বিশেষ লেজার রশ্মি নেত্রস্বচ্ছের আভ্যন্তরীণ অংশে প্রয়োগ করা হয়। তারপর ১২০ মাইক্রোনের পাতলা আবরণটিকে আবার পূর্বের জায়গাতেই বসিয়ে দেয়া হয়। ঠিক যেন আগের অবস্থাতেই ফিরে যাওয়া। 
 

প্রশ্নঃ ল্যাসিক করার পর কতক্ষণ হাসপাতালে থাকতে হয় ?

ল্যাসিক করার পর পোষ্ট ল্যাসিক রিকভারী রুমে রোগীকে  ২০ মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখতে হয় । ২০ মিনিট পর আমরা রোগীকে বাসায় পাঠিয়ে দেই। বাসায় গিয়ে রোগীকে দুই ঘন্টা চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে বলি এবং কিছু চোখের ড্রপ ব্যবহারের নির্দেশ দেই। সামগ্রিকভাবে ল্যাসিক অপারেশনের জন্য হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না, কোন রকম সেলাই লাগে না, ব্যান্ডেজ লাগে না, রক্তপাত হয় না, ব্যাথা লাগে না। রোগী অপারেশনের পর পরই বাসায় চলে যেতে পারেন এবং ২ দিন পরেই স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে যেতে পারেন। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে অসম্ভব রোগী বান্ধব একটি পদ্ধতি। 
 

প্রশ্নঃ ল্যাসিক করার আগে কি কোন পরীক্ষার প্রয়োজন হয় ?

যে কোন শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের আগে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। ল্যাসিকের ক্ষেত্রেও সেটি ব্যতিক্রম নয়। ল্যাসিকের পূর্বে যে সমস্ত পরীক্ষাসমূহ করা হয় সেই গুলিকে সম্মিলিতভাবে আমরা প্রি-ল্যাসিক পরীক্ষা বলে থাকি। প্রি-ল্যাসিক পরীক্ষা সমূহঃ-
 
১। আলোর প্রতিসরণ জনিত দৃষ্টিত্রুটি বা চোখের পাওয়ার নির্ণয় এবং সর্বপরি কতটুকু পাওয়ার ল্যাসিকের মাধ্যমে সারা হবে তা নির্ধারণ করা। 
২। কর্ণিয়াল টফোগ্রাফি ঃ এই যন্ত্রের সাহায্যে কর্নিয়ার বা নেত্রস্বচ্ছের একটি মানচিত্র তৈরি করা হয় যার মাধ্যমে  কর্নিয়ার পাওয়ার দেয়া হবে এবং কর্ণিয়াতে কেরাটোকোনাস নামক কোন অসুখ আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। 
৩। ওয়েবফ্রন্ট এবারোমেট্রি ঃ ওয়েবফ্রন্ট এনালাইজার যন্ত্রের সাহায্যে চোখের উচ্চ মানের বিচ্যুতি যেমন কমা, ট্রিফয়েল, টেট্রাফয়েল, স্ফেরিকাল এভারেশন ইত্যাদি পরিমাপ করা হয়। 
৪। প্যাকিমেট্রি ঃ প্যাকিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে কর্নিয়ার পুরুতা পরিমাপ করা হয়। 
৫। কেরাটোমেট্রি ঃ কেরাটোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে নেত্রস্বচ্ছের বক্রতা পরিমাপ করা হয়। 
৬। টনোমেট্টি ঃ এই যন্ত্রের সাহায্যে চোখের চাপ পরীক্ষা করা হয়। 
৭। কালার ফান্ডাস ইমেজিং ঃ চোখের রেটিনা সরাসরি পর্যবেক্ষণের পাশপাশি রেটিনা এবং অপটিক¯œায়ুর ছবি তোলা হয়। 
 

প্রশ্ন ঃ ল্যাসিকের সর্বশেষ সংযোজন সম্পর্কে ধারণা দিন ।

প্রযুক্তির পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত, ল্যাসিকের ক্ষেত্রেও নতুন নতুন সংযোজন হচ্ছে।
 
১। ল্যাসিক মেশিনের শক্তি ঃ পূর্বের মেশিনগুলোর শক্তি ছিল ৪০-৫০ হার্টজ। বর্তমানে আমরা যে মেশিনগুলো ব্যবহার করছি সেগুলোর শক্তি ২০০-৫০০ হার্টজ। ফলে দ্রুততম সময়ে পাওয়ার সারানো সম্ভব এবং দৃষ্টির মানও হয় চমৎকার। যেমন বর্তমানে প্রতি ১ পাওয়ার সারতে লেজার রশ্মি প্রয়োগ করা হয় মাত্র ১.৪ সেকেন্ড অর্থাৎ কারো পাওয়ার যদি ১০ হয় তা সারতে লেজার রশ্মি প্রয়োগ করা হয় ১৪ সেকেন্ড। পূর্বের মেশিনগুলোতে লেজার রশ্মি প্রয়োগ করতে হতো ৬০ সেকেন্ড এর বেশি।
 
২। লেজার রশ্মির ধরন ঃ পূর্ববতী ল্যাসিক মেশিনগুলোতে যে লেজাররশ্মি ব্যবহার করা হতো সেগুলোকে বলা হতো ব্রড বিম লেজার। অর্থাৎ মোটা লেজার রশ্মি যা সরাসরি আস্ত কর্ণিয়ার উপর পড়তো। ফলে ল্যাসিকের পর গ্লেয়ার বা হ্যালোজ হতো যা রোগীদেরকে রাতে দেখতে সমস্যা করতো। বর্তমানে ল্যাসিক মেশিনগুলোতে রয়েছে ফ্লাইংস্পট লেজার যা খুব চিকন লেজার রশ্মি, মাত্র ০.৯৫ মাইক্রোন। এই রশ্মিগুলো উড়ে উড়ে ছন্দের তালে তালে কর্নিয়া বা নেত্রস্বচ্ছের উপর আপতিত হয়। ফলে দৃষ্টির গুণগত মান অনেক বেশি উন্নত হয়, দৃষ্টি দ্রুততম সময়ে ফিরে আসে এবং সংক্রমণের ঝুকি একেবারে কমে আসে। 
 
৩। রোটেশনাল আই ট্রাকিং ঃ  স্বাভবিকভাবে আমরা রোগীকে একটি সবুজ বাতির দিকে তাকিয়ে থাকতে বলি। রোগীর চোখে চর্তুদিকে চারটি ইনফ্রারেড লেজার ভিডিও ক্যামেরা থাকে যা চোখের গতি-প্রকৃতির দিকে সর্বদা নজর রাখে। চোখ সামান্য নড়ে গেলেও লেজার রশ্মি লম্বালম্বি ভাবেই কর্ণিয়াতে আপতিত হয়। ফলে দৃষ্টির গুণগত মান নিঁখুত হয়। পুরোনো ল্যাসিক মেশিনগুলিতে রোগী চোখ নাড়িয়ে ফেললে লেজারের গুণাগুণ কমে আসতো। ফলশ্রুতিতে দৃষ্টির গুণগতমান সঠিক হতো না। 
 
৪। ওয়েবফ্রন্ট অপটিমাইজেশন বা কাষ্টমাইজেশন ঃ এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণ জনিত দৃষ্টিত্রুটি সারিয়ে দেবার পাশাপাশি চোখের উচ্চমানের বিচ্যুতি ও সারিয়ে দেওয়া সম্ভব। 
 

প্রশ্ন ঃ ল্যাসিকের কোন সীমাবদ্ধতা আছে কি ?

প্রত্যেক প্রযুক্তির কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ল্যাসিক ও তার ব্যতিক্রম নয়। 
 
  1. বয়সগত - যাদের বয়স ১৮ বৎসর এর উপরে এবং যাদের চোখের পাওয়ার বিগত ১ বৎসর যাবৎ -০.৫০ এর বেশি পরিবর্তন হয়নি তাদের চোখেই ল্যাসিক করা হয়।
  2. পাওয়ার - অনুর্ধ  মাইনাস - ১৪
    প্লাস + ৬ 
    সিলিন্ডার ৬
  3. শারীরিক অবস্থা - কিছু কিছু শারীরিক অবস্থায় ল্যাসিক থেকে আমরা সাময়িকভাবে বিরত থাকি। যেমন- স্তন্যদানকারী মা এবং অন্তস্বত্তা মহিলা।
  4. প্রেসবাইয়োপিয়া বা চালশে।
  5. যাদের কর্নিয়া বা নেত্রস্বচ্ছের পুরুতা ৪৯০ মাইক্রোনের কম । 
  6. চোখের অসুখ - যেমন কেরোটোকোনাস, গ্লোকমা, চোখের প্রদাহজনিত জটিলতা এবং চোখের রেটিনার অসুখ। 
 

প্রশ্ন ঃ ল্যাসিক করার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি না ?

প্রয়োজন তখনই হয়, যখন কোন প্রযুক্তির অভাব হয় বা সেটি ব্যবহারের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ এর অভাব হয়। আমাদের দেশে রয়েছে -
১। সর্বশেষ প্রযুক্তির চতুর্থ প্রজন্মের ল্যাসিক মেশিন।
২। দক্ষ ও অভিজ্ঞ ল্যাসিক বিশেষজ্ঞ - যারা ১ দশকেরও বেশি সময় ধরে ল্যাসিক করে আসছেন এবং এই সময়ের মধ্যে তারা এই বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন। 
৩।  ল্যাসিকের খরচ - বিদেশের চাইতে খরচ কিছু কিছু দেশের তুলনায় ৮ ভাগের ১ ভাগ এবং কিছু কিছু দেশের তুলনায় ৪ ভাগের ১ ভাগ। 
৪।  বিশ্বমানের ল্যাসিক - আমরা আমাদের দেশে বিশ্বমানের ল্যাসিক করছি।
৫। অর্থাৎ সব বিবেচনায় ল্যাসিক করবার জন্য বিদেশে গিয়ে বহুকষ্টে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অপচয়ের কোনই প্রয়োজন নেই। 
 

প্রশ্ন ঃ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ল্যাসিকের ভূমিকা কি ?

সামাজিক প্রেক্ষাপটে ল্যাসিকের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ, ভেবে দেখুন আপনার পাশের বাড়ীর মেয়েটি বা ছেলেটির চশমার কারনে বিয়ে হচ্ছে না। পাশের বাড়ীর ছেলেটি মেরিন এ যেতে চায়, পাইলট হতে চায় পারছে না শুধুমাত্র চশমার পাওয়ারের কারনে। সেটিও কেবলমাত্র অজ্ঞতা বা অসচেতনার কারনে। আর আপনি একজন সচেতন মানুষ হিসেবে চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। সেই দিক বিবেচনা করলে ল্যাসিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা একটি সমাজসেবা মুলক কাজ বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে আপনাকে একটি সত্য ঘটনার কথা বলি, যা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন এবং ল্যাসিক সম্পর্কে আপনার ধারণাটাই পাল্টে যাবে। বেশ কিছুদিন আগে ২২ বছরের একটি মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে সে মোটা পাওয়ারের চশমা পরতো। বিয়ের দিন সে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে এবং শ্বশুর বাড়ীতেও সে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরতে থাকে। বিষয়টি তার শ্বশুর বাড়ীর কেউই জানতো না। কিছুদিন পর মেয়েটি বাবার বাসায় যায়। পরবর্তীতে মেয়েটির দেবর যখন বাবার বাড়ী গিয়ে ভাবীকে আনতে যায়, গিয়ে দেখে ভাবীর চোখে মোটা চশমা। বিষয়টি তখন পুরো পরিবারের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মেয়েটির ডিভোর্স হয়ে যায়। পরবর্তীতে মেয়েটি ল্যাসিক করতে আমাদের কাছে আসে। আমরা ল্যাসিক করে দেই। সুখের বিষয় ল্যাসিকের পর মেয়েটির অন্য আর একটি পরিবারে বিয়ে হয়। সে এখন সুখে স্বাচ্ছন্দে বিদেশে নতুন স্বামীর সংসার করছে। 
এ ছাড়া এমন অনেকেই আছে  যাদের শুধুমাত্র চশমার কারনে বিয়ে হচ্ছে না। এমনকি অনেকের এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে গেছে। 
তারেক মাসুদ পরিচালিত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর নির্মিত মুক্তির গান ছবিতে জনৈক মুক্তিযোদ্ধা যিনি মূলত একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, তিনি চোখে মোটা চশমা পরে শরণার্থী শিবির এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যোগান। কোন একদিন তিনি তার কমান্ডারের কাছে গিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করেন। কমান্ডার তার মোটা চশমার বিষয়টি উল্লেখ করে অস্ত্র চালাতে অসুবিধা হবে এ বিবেচনায় তাকে সরাসরি যুদ্ধ থেকে বিরত থেকে দেশাত্ববোধক  সংগীতের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করার পরামর্শ দেন। 
 
 

প্রশ্ন ঃ  ল্যাসিক কোন কসমেটিক সার্জারী কিনা ?

না, ল্যাসিক কোন কসমেটিক সার্জারী না। মুলত এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রিফ্রাকটিভ সার্জারী। এখন রিফ্রাকটিভ সার্জারী বিষয়টি কি? রিফ্রাকটিভ সার্জারী হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের শৈল্য চিকিৎসা যা আলোর প্রতিসরণ জনিত দৃষ্টিত্রুটিকে সারিয়ে দিয়ে চোখের দৃষ্টির উন্নয়ন সাধন করে। ফলে একজন রোগী চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স এর সাহায্য ছাড়াই পরিস্কার দেখতে সক্ষম হন। আজ পর্যন্ত যতগুলো রিফ্রাকটিভ সার্জারী আবিস্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র ল্যাসিক-ই হচ্ছে এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ প্রযুক্তি যা দৃষ্টিজনিত ত্রুটি সারাতে সর্বাধিক কার্যকরী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয়।  
 
তবে ল্যাসিক এর অবশ্যই একটি কসমেটিক বা এস্থেটিক ভ্যালু রয়েছে। দেখুন, আমরা যারাই চশমা পড়ি প্রয়োজনেই পড়ি বা বাধ্য হয়েই পড়ি। মজার ব্যাপার হলো কি - যারাই চশমা পরে তাদের শতকরা ১০০ জনই মন থেকে চায় না চশমা পরতে। তবে কারন হলো, চশমা মুখের এবং চোখের সৌন্দর্য ঢেকে রাখে। 
 
আমরা সকলেই জানি চোখ মনের কথা বলে। কবি জীবনানন্দ দাসের ভাষায় - ‘পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’। আর সেই চোখটি যদি চশমার ফ্রেমে বন্দী থাকে তা হলে ব্যাপারটি নিশ্চয়ই দৃষ্টি নন্দন হয় না। এই পুরো বিষয়টিই কিন্তু  আমি আমার রোগীদের খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছি।
  
ল্যাসিক একটি যুগান্তসৃষ্টিকারী পদ্ধতি যা একজন রোগীকে চশমামুক্ত স্বচ্ছ দৃষ্টি নিশ্চিত করে। তাই একজন ল্যাসিক রোগী যিনি আগে  মোটা পাওয়ারের চশমা পরতেন যা ছাড়া তিনি চলতেই পারতেন না, ল্যাসিক করার পরে সংগত কারনেই তাকে অনেক বেশী স্মার্ট বা আকষর্ণীয় মনে হবে এবং সেটা কিন্ত ল্যাসিক এর গুণেই। আর তাই ল্যাসিক-কে কেউ কেউ  কসমেটিক সার্জারী বলে বসলেও সেটি কিন্তু এই সার্জারীর মূল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হলো খালি চোখে আরও দশটা মানুষের মতই পরিস্কার দেখা। কারন মানুষ হিসেবে কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই পরিস্কার দেখার অধিকার সকলেরই আছে। আর ল্যাসিক সেই অধিকারকেই নিশ্চিত করে। 
 

প্রশ্ন ঃ রোগীর উপর ল্যাসিকের প্রভাব কি ?

একজন ল্যাসিক রোগীর উপর ল্যাসিকের প্রভাব- এক কথায় অপরিসীম এবং একেবারেই যাদুকরী। ল্যাসিক শব্দটা ছোট কিন্তু এর ব্যাপকতা বিশাল। ল্যাসিক একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী এবং যুগান্তকারী পদ্ধতি যা চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ছাড়াই স্বচ্ছ ও উন্নত দৃষ্টি নিশ্চিত করে। ফলে ল্যাসিকের পর অধিকাংশরাই পড়াশোনা, খেলাধুলা, শখ, অভিনয়, মডেলিং বা অন্যান্য পেশাগত কাজ আগের চেয়ে অনেক বেশী সহজ ও সাবলীল ভাবে করতে পারেন।
 
দেখুন, চশমা পড়া প্রতিনিয়ত একজন মানুষকে মনে করিয়ে দেয় “আমার চোখ খারাপ”। বিশেষ করে যারা ২-৩ পাওয়ারের চশমা পরে তারা কিন্তু চশমা খুললেই ২-৩ মিটারের বাইরের কিছু পরিস্কার দেখতে পায় না। ফলে ঘুম থেকে উঠে চশমা হাতরানো অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়। মূলত তাদেরকে এক ধরনের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলা চলে। 
 
ল্যাসিকের পর এরা সবাই নতুন জীবনের সন্ধান খুঁজে পায়। নতুন করে নিজেকে ভাবতে শেখে। এ যেন এক নতুন আত্মআবিষ্কারের অধ্যায়। এক নতুন পথ চলা। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা যা তারা আগে কখনো কল্পনাও করে নি। শুধু তাই নয়, দৃষ্টির উন্নয়নের সাথে সাথে ল্যাসিক রোগীর জীবনের মানেরও উন্নয়ন ঘটে। তারা এক নতুন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয় যা তার জীবন যাপনের উপর বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তার এই আত্মবিশ্বাস তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এমনকি পেশাগত জীবনে সফলতা ও দক্ষতা অর্জনে আরও বেশি শক্তি জোগায়। 
এরই মধ্যে আমি অনেককেই ল্যাসিক করেছি যারা মেরিন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং পাইলট এ ভর্তি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিয়ের ব্যাপারে ল্যাসিকের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কাছে যে সমস্ত ল্যাসিক রোগী আসেন এদের মধ্যে শতকরা ৩০ জনই আসেন বিবাহজনিত কারণে। মূলত বিভিন্ন পেশায় যারা যেতে চায় ল্যাসিক তাদের জন্য এক নতুন দিগন্তের, নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। 
ল্যাসিক হচ্ছে একটি স্থায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা। ল্যাসিক করার পর হাটতে হাটতেই ল্যাসিক রুম থেকেই  রোগীরা বেরিয়ে যায়। 
শুধু তাই নয় ল্যাসিকের পর দিনই শুধু ল্যাসিক রোগীরাই নন, তাদের পরিবারের  অনান্য সদস্যরাও সকলেই ভীষণ খুশি থাকে।
ল্যাসিক হলো একটি পরিপূর্ণ মুক্তি। মুক্তি কে না চায় ? এটা হচ্ছে কমপ্লিট ট্রিটমেন্ট, টোটাল কিউর। 
 
চোখ মনের আয়না আমরা সেই আয়নাকে চশমা দিয়ে ঢাকতে চাই না। যারা মোটা চশমা পড়ে তারা এক ধরনের হীনমন্যতায় ভুগে থাকে। শুধু তাই নয়, চশমাতে স্ক্রাচ বা দাগ পড়ে, পাওয়ার পরিবর্তন হয় এবং মেয়াদান্তে লেন্স পরিবর্তন করতে হয়। এছাড়া দুর্ঘটনায় চশমার কাজ টুকরো হয়ে চোখে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। 
 
কন্ট্যাক্ট লেন্স সকালে পরতে হয়, ঘুমানোর আগে খুলতে হয়, পরিচর্যার প্রয়োজন হয়, কিছুটা ব্যয়বহুল, হারিয়ে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এবং সংক্রমনের ঝুকি বেশি থাকে।
 
ল্যাসিকের ক্ষেত্রে আমরা চোখের ভেতরেই ঢুকছি না। এটা চোখের বাইরের অপারেশন। যেমন ছানি অপরাশেন করা হয় চোখের ভিতরে, আর ল্যাসিক করা হয় চোখের উপরিভাগে। 
 

প্রশ্ন ঃ ল্যাসিকের ব্যাপারে কেমন সাড়া পাচ্ছেন ?

ভালই সাড়া পাচ্ছি। তবু একটি ব্যাপার যেটি উল্লেখ করতে হয়, সেটি হলো আমাদের মত অনঅগ্রসর সমাজ ব্যবস্থায় আমরা নতুন কিছু গ্রহণ করতে কমবেশী বিলম্ব করি। আবার অনেক সময় নতুন কিছু নিজে জান্তে বা অপরকে জানাতে আগ্রহ প্রকাশ করি না। অর্থাৎ অনেক সময়েই এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়। এ ছাড়া যখন কোন নতুন প্রযুক্তির আবিভার্ব ঘটে তা সমাদৃত হতে একটু সময় লাগে। আর এই সময়টুকু দিতেই হয়। তবে আশার কথা হলো এখন অনেক রোগীরাই ল্যাসিক সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন এবং ল্যাসিক করাচ্ছেন। প্রাথমিক ভাবে শুধুমাত্র অসচেতনতার কারণে ল্যাসিক রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। আসল কথা হলো এটি যে, যত দিন যাচ্ছে রোগীরা সচেতন হচ্ছেন, ল্যাসিকের ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহবোধ করছেন এবং আমার ধারণা অচিরেই উন্নত দেশগুলোর মতই আমাদের দেশের রোগীরাও তাদের দৃষ্টিত্রুটি সারিয়ে নেবার জন্য ল্যাসিককেই বেছে নিবেন। 
 

ল্যাসিক উৎসব ঃ

ল্যাসিক অপারেশনের দিনটিকে আমরা ল্যাসিক উৎসব বলে থাকি। ওই দিন ল্যাসিকের পর খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই। 
 

হঠাৎ দৃষ্টি ঃ 

একজন ল্যাসিক রোগী পরের দিন ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলেই দেখে সারা দুনিয়া পরিস্কার। যেটা সে আগে কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। এটাকে আমরা বলি হঠাৎ দৃষ্টি। 
 

ল্যাসিকের পরের দিন ঃ

ল্যাসিকের পরের দিনটা দারুন মজার। আমি চুপচাপ বসে থাকি। দুর থেকে লক্ষ্য করতে থাকি আগের দিন ল্যাসিক করা রোগীরা হাসতে হাসতে ল্যাসিক ফলোআপ এ আসছে। তাদের চোখেমুখে এক অবিশ্বাস্য আনন্দের ছাপ। কি যে অনুভুতি তা ভাষায় বুঝানো কঠিন। এত ড্রামাটিক রেজাল্ট বা নাটকীয় ফল সারা শরীরের অন্য কোন অপারেশনে হয় কি না আমার সন্দেহ। এ পর্যন্ত যত শল্য চিকিৎসা আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে ল্যাসিকই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। আমেরিকাতে প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষ ল্যাসিক করে।
 
 

কেন ল্যাসিক করাবেন ?

আপনি কি আপনার চশমার কারণে প্রিয় কোন সখ-সাধ পূরণে হতাশ হয়েছেন ?
চশমার কারণে আপনি কি খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছেন ?
ঘুম থেকে জেগে ঘড়িতে সময় দেখতে চশমা হাতড়ে বেড়ানো কি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ?
কখনও কি এমন বিড়ম্বনায় পড়েছেন, যে হঠাৎ করেই আপনার প্রিয় কন্টাক্ট লেন্সটি চোখ থেকে খসে মাটিতে পড়ে গেছে, আর আপনি ঝাপসা দেখার অস্বস্তিতে ভুগছেন ?
আপনি কি সেই স্বপ্ন দেখছেন যেখানে চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ছাড়াই স্বচ্ছ ও উন্নত দৃষ্টি আর জীবন উপভোগ করা সম্ভব?
হ্যাঃ ল্যাসিক সেই স্বপ্ন পূরণ আর সম্ভাবনারই দ্বার খুলে দেয়। 
 

অপারেশনের দিন আপনার করণীয় ঃ

মাথায় শ্যাম্পু বা সাবান দিয়ে ভাল করে স্নান সেরে নিন। 
চোখে-মুখে কোন রকম মেক-আপ থেকে বিরত থাকুন। 
খাওয়ার ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি খালি পেটে থাকারও প্রয়োজন নেই। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য অসুখ থাকলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ মত সেগুলো চালু রাখুন। 
বেশী টাকা পয়সা / গহনা বা ছোট বাচ্চা সাথে আনবেন না। 
সঙ্গী হিসাবে কাউকে সাথে আনবেন যিনি আপনাকে অপারেশনের পর নিরাপদে বাসায় পৌছে দেবেন। 
পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী হাসপাতালে রিপোর্ট করুন। 
 

ল্যাসিকের পর বা অপারেশনের পরবর্তী  বিধি ঃ

ল্যাসিকের পরপরই কিছুক্ষণের জন্য হালকা জ্বালাপোড়াসহ  চোখ থেকে পানি পড়তে পারে। 
সাধারণতঃ দুই সপ্তাহ চোখে ড্রপ দেয়ার প্রয়োজন হয়। কখনও কখনও দীর্ঘ দিনও ড্রপ দেয়া লাগতে পারে। 
সোজা বাড়িতে গিয়ে সারাদিন বিশ্রাম করুন। পারলে কয়েক ঘন্টা ঘুমান। 
বাড়ীতে ফেরার সময় কার, বাস বা ট্রেনের জানালার ধারে বসবেন না। বসলে জানালা বন্ধ রাখুন যেন চোখে সরাসরি বাতাস না লাগে।
১ সপ্তাহ চোখে দিনে নিরাপত্তা চশমা এবং রাতে আই শিল্ড লাগিয়ে রাখুন যা আপনার চোখকে যে কোন আঘাত বা ঘষা থেকে রক্ষা করবে। 
৩ দিন মাথা ভিজিয়ে গোসল করবেন না, যেন চোখের ভেতরে পানি না যায়। তবে গলা ভিজিয়ে স্লান সারতে পারেন। 
১ মাস সাতার কাঁটা বা খেলাধুলা থেকে বিরত থাকুন। 
 

ল্যাসিকের পর কতবার ডাক্তারের কাছে আসতে হবে ?

পরের দিন, সাত দিন, এক মাস, তিন মাস, ছয় মাস ও এক বৎসর পর। তবে প্রয়োজনে যে কোন সময়। 
 

কখন আমি আমার কাজে ফেরত যেতে পারব ?

অপারেশনের ২-১ দিন পরেই আপনি স্বাভাবিক কাজ-কর্ম শুরু করতে পারেন। 
 

ল্যাসিক এত জনপ্রিয় কেন ?

ল্যাসিক বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। কারণ এটি একটি নিরাপদ এবং যথাযথ কার্যকর পদ্ধতি। ল্যাসিকের জন্য হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। অপারেশনের আধা ঘন্টা আগে আসতে হয়। সব মিলিয়ে সময় লাগে ১০ মিনিট। যদিও প্রকৃত লেজারের সময় ৩০ সেকেন্ডেরও কম। অপারেশনের আগে বা পরে চোখে কোন রকম ইনজেকশনের প্রয়োজন হয় না, অপারেশনের পর কোন ব্যান্ডেজ লাগে না, চশমা লাগে না, সেলাই লাগে না, কোন রকম ব্যাথাও লাগে না।
 
আপনি যেভাবে আসবেন অপারেশনের পর ঠিক স্বাভাবিকভাবেই বাসায় চলে যাবেন। চোখ দেখে কেউ বলতেও পারবে না যে আপনার অপারেশন হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপারেশনের পরই রোগী চশমা ছাড়াই ভাল দেখতে শুরু করেন এবং পরের দিনই স্বাভাবিক কাজ-কর্ম শুরু করতে পারেন। এটা মনে রাখা জরুরী যে ল্যাসিক কোন পরীক্ষামুলক সার্জারী নয়। বরং এটি লেজারের মাধ্যমে চোখের দৃষ্টিগত ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার একটি সর্বজন স্বীকৃত পদ্ধতি যা সারাবিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ল্যাসিক বর্তমানে চশমার বিকল্প হিসাবে সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং পৃথিবী জুড়ে এর প্রসার অভাবনীয়। 
 

সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঃ

ল্যাসিক একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও আরামদায়ক পদ্ধতি। এতে তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে কারও কারও অপারেশনের পর সাময়িক ভাবে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায় এবং চোখে শুষ্কতা অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়া ল্যাসিক চিকিৎসা কিছুটা অপর্যাপ্ত বা অতিরিক্তও হতে পারে। কখনও কখনও অবশিষ্ট পাওয়ার সেরে দেয়ার জন্য পুনরায় ল্যাসিকের প্রয়োজন হতে পারে। 
 

সম্ভাব্য সীমাবদ্ধতা ঃ

প্রত্যেক প্রযুক্তিরই কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ল্যাসিকও এর ব্যতিক্রম নয়। ল্যাসিক একটি চমৎকার পদ্ধতি যা চশমমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স এর উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বচ্ছ দৃষ্টি নিশ্চিত করে। ফলে ল্যাসিকের পর অধিকাংশরই খেলা-ধুলা, শখ বা পেশাগত কাজ আগের চেয়ে সহজ, সাবলীল ও স্বাধীনভাবে করতে পারেন। 
 

আপনি ল্যাসিকের জন্য উপযুক্ত না হলে আর কোন বিকল্প পদ্ধতি আছে কি ?

হ্যাঁ। আপনি যদি ল্যাসিকের অনুপযুক্ত হন তবে বিকল্প পদ্ধতিও রয়েছে। সেগুলো হলোঃ পি.আর.কে, ল্যাসিক, এপিল্যাসিক ফেকিক আইওএল, ইনট্যাক্ট, ক্লিয়ার লেন্স এক্রচেঞ্জ এক্সট্রাকশন ইত্যাদি। এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারই আপনাকে সঠিক পরামর্শ দেবেন। 
 

অপারেশনের পর দৃষ্টি কি সাথে সাথেই পরিস্কার হয় ?

অপারেশনের পরপরই খালি চোখেই দৃষ্টির উন্নতি শুরু হয়। প্রথম কয়েক ঘন্টা দৃষ্টি কিছুটা ঝাপসা থাকে। অধিকাংশ রোগীরা পরের দিন থেকেই বেশ পরিস্কার দেখতে শুরু করে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই দৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে কখনও কখনও কয়েক সপ্তাহ দৃষ্টি ওঠা-নামা করতে পারে। 
 

ল্যাসিক করানোর পর আবার কি চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স প্রয়োজন হয় ?

না, হয় না। ল্যাসিকের অন্যতম উদ্দেশ্যই হল চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ছাড়াই দৈনন্দিন কাজ-কর্ম সম্পাদন করা। তবে যাদের চোখের পাওয়ার আগের থেকেই খুব বেশি ছিল যা ল্যাসিকের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে সারানো সম্ভব নয়, তাদের ক্ষেত্রে কম পাওয়ারের চশমা লাগতে পারে। এছাড়া বয়স ৪০ এর দিকে হলে অন্য সকলের মত পড়ার চশমার প্রয়োজন হবে। কারণ ল্যাসিক শুধুমাত্র দূরের পাওয়ার সেরে দেয়। কিছুদিন আগেও চশমা ও কন্ট্যাক্ট লেন্স ছাড়া স্বাভাবিক দৃষ্টির অন্য কোন বিকল্প ছিল না। বর্তমানে চক্ষু চিকিৎসায় সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারি ল্যাসিক লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে চশমা ও কন্ট্যাক্ট লেন্স ছাড়াই চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক করা যায়। 

Contact with Us

Copyright 2013-2024 © All Right Reserved. Dhaka Eye Care Hospital